সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড/গিরিখাত কী এবং এর রহস্য
⏺সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড/গঙ্গাখাত/গিরিখাত কী এবং এর রহস্য:
⏩সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড (Swatch of No Ground) খাদ আকৃতির সামুদ্রিক অববাহিকা বা গিরিখাত, যা বঙ্গোপসাগরের মহীসোপানকে কৌণিকভাবে অতিক্রম করেছে। এটি গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র বদ্বীপের পশ্চিমে অবস্থিত। গঙ্গা খাদ নামেও এটি পরিচিত। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের আরও কিছু বদ্বীপমুখী খাদ দেখতে পাওয়া যায়, যেমন সিন্ধু নদীর মোহনার অদূরে সিন্ধু খাদ, মিসিসিপি বদ্বীপের পশ্চিম পাশে মিসিসিপি খাদ। মহীসোপানের কিনারায় খাদের গভীরতা প্রায় ১,২০০ মিটার। ধারণা করা হয়, বঙ্গোপসাগরের নিচে কান্দা ও উপ-বদ্বীপ উপত্যকার আকারে সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড সাগর অভিমুখে প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার সম্প্রসারিত হয়ে আছে। সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডের দিকে মুখ করে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র বদ্বীপের মোহনার কাছে বালুচর ও শৈলশিরার অবস্থিতি এই ইঙ্গিতই বহন করে যে, এই খাদ দিয়েই পলল বঙ্গোপসাগরের গভীরতর অংশে বাহিত হয়। বঙ্গীয় ডিপ সি ফ্যানের ওপর গবেষণায় দেখা গেছে যে, সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড অবক্ষেপপূর্ণ ঘোলাটে স্রোত এনে বেঙ্গল ফ্যানে ফেলছে। বঙ্গীয় ডিপ সি ফ্যানের অধিকাংশ পলল গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র সঙ্গমস্থলে উদ্ভূত। এগুলো যথাক্রমে হিমালয়ের দক্ষিণ ও উত্তর দিক থেকে আসছে। বর্তমান অবস্থায় স্বল্প পরিমাণের ঘোলাটে স্রোত আর বালি সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডের মাধ্যমে মহীসোপান থেকে গভীর সমুদ্রে পলল পরিবহণের প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করছে।
সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডের উৎপত্তি নিয়ে কিছু মতভেদ রয়েছে। অবশ্য সাধারণভাবে মনে করা হয়ে থাকে যে, পাইসটোসিন যুগে (২০ লক্ষ থেকে ১ লক্ষ বছর আগে) নিম্ন সমুদ্রপৃষ্ঠে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র নদীর পললের স্তূপ সরাসরি মহীসোপান প্রান্তে নির্গত হয়েছে। সোপান প্রান্ত ও সোপান প্রান্তের ঊর্ধ্ব ঢালে উৎপন্ন ঘোলাটে স্রোত ও নদী-প্রবাহের সম্মিলিত প্রভাব সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড গঠনের জন্য দায়ী। বঙ্গীয় ডিপ সি ফ্যানের লক্ষণ প্রমাণাদিও এই ধারণাকে সমর্থন করে বলে মনে হয়। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, পাইসটোসিন যুগে সমুদ্রপৃষ্ঠ যখন নিম্নতর ছিল তখন বঙ্গীয় ডিপ সি ফ্যানে ঘোলাটে স্রোতের প্রভাবে অবক্ষেপণ সংঘটিত হতো; আর উপ-বদ্বীপটিতে পলল বণ্টিত হতো সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড থেকে উদ্ভূত আন্তঃসাগরীয় খাল (submarine channel) থেকে।
⏺নামকরন:
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড নামকরণ করা হয়েছিল কারণ, যেখান থেকে এ অঞ্চলের শুরু সেখানেই হঠাৎ পানির গভীরতা বেড়ে গেছে। তাই ব্রিটিশদের ধারণা ছিল, সমুদ্রের এই খাদের কোনো তল নেই। সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডকে স্থানীয়রা বলে ‘নাই বাম’। কারণ, তারা সাগরে ফুট কিংবা মিটারে হিসাব না করে বাম, দশ বাম, বিশ বাম, আর ওই জায়গা নাই বাম, মানে এই জায়গাটির কোনো হিসাব নেই, যা মারিয়ানা ট্রেঞ্চের মতো। বাংলায় বলে অতলস্পর্শী। আর এর নামকরণের পেছনে রয়েছে একটি রহস্য, ১৮৬৩ সালে গ্যাডফ্লাই নামে ২১২ টন ওজনের একটি ইংরেজ গানবোট ভারত থেকে যুক্তরাজ্যে বিপুল ধনরত্ন সহ পাড়ি দেবার সময় ঝড়ের কবলে পড়ে এই স্থানে ডুবে যায় । পরবর্তীতে বিজ্ঞানীর অনেক খোঁজাখুঁজি করেও বোটটার খোঁজ না পেয়ে এর নাম দেয় সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড, যা সংক্ষেপে গবেষকরা সুন্দর নামও দিয়েছেন—SONG।
Nice🤩🤩
ReplyDelete